
নওগাঁ প্রতিনিধিঃ
চিকিৎসকদের সময়মতো না আসা, রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসক-নার্সদের দুর্ব্যবহার, দালালের দৌরাত্ম, ওষুধ কালোবাজারে বিক্রি, চিকিৎসা সেবায় অব্যবস্থাপনাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে তালা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। হাসপাতালের কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে তালাবদ্ধ রাখার ঘোষণা দেন তাঁরা।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা ২৫০ শয্যবিশিষ্ট নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হাসপাতালের পুরাতন ভবনের ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে।
পরে তাঁরা হাসপাতালের তত্ত্ববধায়কের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় তত্ত্ববধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী তাঁর কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার পর হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড, বহির্বিভাগের চিকিৎসকদের চেম্বার, মেডিসিন স্টোরসহ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা।
হাসপাতাল পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জেরা করেন এবং সংশোধন হয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নওগাঁর ছাত্র প্রতিনিধি ফজলে রাব্বী, মেহেদী হাসান, রাফী বিন রেজওয়ান, সাদমান সাকিব, রিয়াল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নওগাঁর ছাত্র প্রতিনিধি ফজলে রাব্বী বলেন, নওগাঁ সদর হাসপাতালে দীর্ঘ দিন ধরে চরম অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে। এই হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকেরা সময়মতো ডিউটিতে আসেন না। আবার ডিউটি সময়ে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন না করে অনেক চিকিৎসক বাইরে ব্যক্তিগত চেম্বারে কিংবা ক্লিনিকে গিয়ে রোগী দেখেন। হাসপাতালে রোগীদের জন্য খাবার দেওয়া হয় সেটাও অত্যন্ত নিম্নমানের ।
এছাড়া হাসপাতাল থেকে ওষুধ বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের রয়েছে। এখানে দালালের দৌরাত্ম ব্যাপক। দালালদের কারণে রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা ব্যাপক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায় এসব অব্যবস্থাপনা দূর করার জন্য ৫ আগস্টের পর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কসহ প্রশাসনিক বিভাগের কর্মকর্তাদের একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু তারপরেও তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কোনো উদ্যোগ নেননি। দ্বায়িত্বে অবহেলার জন্য আজকে তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে তালা দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসার পরিবেশ ফিরে না আসা পর্যন্ত তাঁকে তাঁর কক্ষে বসতে দেওয়া হবে না।
হাসপাতালের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে সে বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আবু জার গাফফার শিক্ষার্থীদের সামনে হাজির হয়ে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সব দাবি করেছে তাঁর সবই যৌক্তিক। ইতোমধ্যে তাঁদের অনেক দাবি পূরণ করা হয়েছে। বাকি যে সব অনিয়ম-অসঙ্গগতির কথা বলা হচ্ছে, আরএমও হিসেবে আমার জায়গা থেকে সেসব দাবি পূরণের চেষ্টা করব। তবে আমি এই হাসপাতালের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ নই। আমার ওপরেও কর্তৃপক্ষ আছেন। সবার সঙ্গে আলোচনা করে দাবিগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তা রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
নওগাঁ