
মো: সবুজ হোসেন রাজা,সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
ঘন কুয়াশা, হিমেল হাওয়া ও মাঘ মাসের কনকনে শীত উপেক্ষা করেও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৃষকরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বোরো ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলার প্রায় প্রতিটি কৃষিজমি, এমনকি শুকিয়ে যাওয়া খাল-বিল ও নদীর অববাহিকাতেও কৃষকরা বছরের প্রধান ফসল বোরো ধান চাষে নেমে পড়েছেন।
উপজেলার মাটি বোরো চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় অধিকাংশ কৃষক কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। দলবেঁধে নারীরা ও পুরুষরা জমিতে পানি দেওয়া, চাষ করা, আগাছা পরিষ্কার, মই টেনে সমান করা, সার দেওয়া ও বীজতলা থেকে ধানের চারা উত্তোলনের কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে ধানের কচি চারার সবুজ গালিচা বিস্তৃত হয়েছে। কোথাও গভীর নলকূপের সাহায্যে চলছে সেচ দেওয়া, আবার কোথাও ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষের কাজ চলছে। কেউবা মই দিয়ে জমি সমান করছেন, কেউবা বীজতলা থেকে চারা তুলে তা রোপণ করছেন।
কৃষকদের শরীরে শীতের হালকা পোশাক, মাথায় গরম কাপড়, কিন্তু তাঁদের মনপ্রাণ জুড়ে চাষাবাদের আনন্দ। কৃষাণ-কৃষাণীরা ফুরফুরে মেজাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন—কেউ জমিতে হাল চাষ করছেন, কেউবা জমির আইলে কোদাল চালাচ্ছেন, কেউ জৈব সার প্রয়োগ করছেন, আবার কেউ সেচের জন্য ড্রেন নির্মাণ বা শ্যালো মেশিনের ঘর তৈরি করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এ বছর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ হাজার ৬৮০ হেক্টর। এরই মধ্যে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ সম্পন্ন হয়েছে।
হাবিবুল্লাহ নগর ইউনিয়নের কৃষক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই। বিগত বছরের মতো এবারও ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি।
শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জেরিন আহমেদ বলেন, শাহজাদপুরের প্রধান কৃষি ফসল ধান হওয়ায় সর্বত্রই কৃষকরা জমি প্রস্তুত করছেন। উপজেলার প্রায় সব কৃষক নিজস্ব বীজতলা তৈরি করেছেন, যা মানসম্পন্নও রয়েছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছেন।
তিনি আরও জানান, আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এ বছর প্রায় ২২ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের সম্ভাবনা রয়েছে।
শীতের সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শাহজাদপুরের কৃষকরা। মাঠজুড়ে এখন শুধু বোরো ধানের চারা রোপণের দৃশ্য, যা কৃষির অগ্রযাত্রার প্রতিচিত্র হয়ে উঠেছে। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে, তাহলে চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা।